মুহাম্মদ ইয়াকুব
কবি ও কথাসাহিত্যিক
উপদেষ্টা সম্পাদক – ত্রৈমাসিক ‘শব্দবাজ।’
বঙ্গোপসাগরীয় সভ্যতার খুঁটি পাহাড়বেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে জন্ম নেওয়া অনুজ কবি মুহাম্মদ হেদায়ত উল্লাহর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মানুষ হওয়ার স্বপ্ন’ সত্যিকারের মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। মুহূর্তেই পাঠককে হতাশার গ্লানি ভুলিয়ে সফলতার আলোকপানে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। সাগর, নদী, পাহাড়–একসাথে তিন ঐশ্বর্যের কবি হওয়ায় চমৎকার উপমা-উৎপ্রেক্ষার সার্থক ব্যবহার তার কবিতার শরীরকে শক্তিশালী করেছে। ‘মানুষ হওয়ার স্বপ্ন’- এ একসাথে গ্রন্থিত হয়েছে শিশু, কিশোর এবং তারুণ্যের জন্য পাঠমুগ্ধ হবার যথেষ্ট খোরাক। পরিবার, গ্রাম, নগর, দেশ, নারী, মানবতা, ধর্ম, আলোকিত মানুষ ইত্যাদি বিষয়ে সুরের গুঞ্জরণে ছন্দোময় বিন্যাস গ্রন্থটিকে সুশোভিত করেছে।
‘মানুষ হওয়ার স্বপ্ন’ গ্রন্থে কবি মুহাম্মদ হেদায়ত উল্লাহ আজানের সুললিত সুরের ব্যঞ্জনধ্বনি শিশু-কিশোর মনে চমৎকারভাবে গেঁথে দিয়েছেন, ‘মিনার হতে মুয়াজ্জিনের/আসছে মধুর সুর/ছুটছে ধরায় চতুর্দিকে/সাগর- সমুদ্দুর’ (আহবান)।
পৃথিবীতে সবার ছুটি আছে, মায়ের কোনো ছুটি নাই। মায়ের কর্মব্যস্ত সময়কে কবি মুহাম্মদ হেদায়ত উল্লাহ দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন,
‘মুয়াজ্জিনের জাগার আগে জাগো তুমি রোজ/বাবার জন্য তৈরি করো পিঠা-পুলির ভোজ/আটা দিয়ে বোনের জন্য রুটি বেলো গোল/ভাইয়ার জন্য বানাও তুমি ইলিশমাছের ঝোল’ (নেই তো মায়ের ছুটি)। কবি মায়ের পাশাপাশি বাবার কষ্টও অঙ্কন করতে ভুলেননি, ‘খাটছি আমি কষ্ট চেপে/তাদের সুখের জন্য/তাদের সুখে জীবন দিয়ে/পুরুষ আমি ধন্য’ (পুরুষ আমি ধন্য)।
দল-উপদলে বিভক্ত মুসলিম উম্মাহর ঐক্যপ্রক্রিয়ার দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। সবাই মনে করে তারাই সত্যপন্থি, অন্যরা সব বাতিল। উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য কামনায় কবির কলম এমন ধারণা পোষণকারীদের প্রতি তীব্র কটাক্ষে ভরপুর, ‘আমি হলাম হকের ডিলার/আমিই কেবল সৎ/আমি ছাড়া ধরার মাঝে/সবাই হলো বদ’ (হক সমাচার)।
নারীকে মানুষ মনে না করার প্রবণতা কথিত প্রগতিশীল সমাজেই বেশি। বাইরের চাকচিক্যময় আবরণের অন্তরালে ঘরে নারী কতটা সুখী, তার হিসাব কেউ রাখে না। ঘরে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কবির কলম মানুষের বিবেকে শক্তিশালী আঘাত করেছে,
‘সবাই মিলে যেমন খুশি/করে ব্যবহার/তারপরও গিন্নি আমার/পায় না অধিকার’ (মানুষ হওয়ার জন্য)।
‘মানুষ হওয়ার স্বপ্ন’ কাব্যগ্রন্থে কবি মুহাম্মদ হেদায়ত উল্লাহ এভাবেই প্রত্যেক কবিতায় এঁকেছেন জীবনধর্মী ও বাস্তবমুখী কল্পচিত্র, যা শিশু, কিশোর এবং তারুণ্যে মানুষ হওয়ার প্রেরণাদায়ক উদ্দীপকের কাজ করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
প্রত্যেক সচেতন অভিভাবক নিজেদের শিশু-কিশোর সন্তানদের প্রকৃত মানুষ হওয়ার উপকরণ হিসেবে গ্রন্থটি সংগ্রহ করতে পারেন এবং নিজেরাও পড়ে নিজেদের বিশ্বাসকে ঝালাই করার প্রেরণা পেতে পারেন। আমি গ্রন্থটির পাঠকপ্রিয়তা কামনা করছি এবং আশাবাদ ব্যক্ত করছি, গ্রন্থটি ভবিষ্যৎ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদে পরিণত হবে।